★মেকানিক্যাল ইজ্ঞিনিয়ারিং চাকুরী প্রস্তুতির পূর্বকথন★
★কিভাবে শুরু করবো? ★
শুরুতেই বিভিন্ন চাকুরী পরীক্ষার প্রশ্নগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা নেওয়া
উচিত। বিভিন্ন পরীক্ষার পূর্বের বছরের প্রশ্নগুলোর ধরণ দেখে নিলে কিভাবে
প্রস্তুতি নিতে হবে তার উপর মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যাবে।এরপর একটা
লিস্ট বানিয়ে ফেলতে হবে কোন কোন সাবজেক্টগুলো পড়া লাগবে? উক্ত
সাবজেক্টগুলোর জন্য কোন কোন লেখকের বই পড়তে হবে সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে।
★পরীক্ষা কেন্দ্রের উপর নির্ভর করবে প্রস্তুতির ধরন!★
মেকানিক্যালের অধিকাংশ চাকুরীর পরীক্ষা BUET-এ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিছু
কিছু পরীক্ষা হয় MIST তে। আবার কোন কোন পরীক্ষার প্রশ্ন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের IBA ডিপার্টমেন্ট করে থাকে। BPSC-এর সকল পরীক্ষার প্রশ্ন
BPSC-এর সিলেবাসেই হয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান BUET বা MIST ছাড়াও মাঝে মাঝে
নিজেরাই পরীক্ষা নিয়ে থাকে।যেমনঃ REB, BIWTA ইত্যাদি।আবার কিছূ পরীক্ষার
প্রশ্ন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ভেদে রুয়েট,কুয়েটেও হয়ে থাকে।তবে সবগুলো
প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নের ধরণ কিছুটা একই রকম।সেক্ষেত্রে ভিন্নতা বলতে কোথাও
নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন হয় আবার কোথাও লিখিত হয়। আবার মাঝে মাঝে REB
নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত দুই-ই নেই।
★চাকুরিজীবীদের প্রস্তুতির জন্য একটু বেশি কষ্ট করতে হবে।★
মধ্যবিত্ত পরিবারের সবারই কম বেশি পাশ করেই আগে চাকুরী করার একটা তাড়া
থাকে। আর সেজন্য সবারই কষ্ট করতে হয়। এটাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই নেওয়া উচিত।
এসব ক্ষেত্রে ভালো ভাবে নিজের এন্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার করা যেতে পারে।
অফিসে যাওয়া আসার সময় ফোনে কিছু পড়াশুনা করার অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে।
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ফোনে বইয়ের দুই-চারটা পেজ ছবি তুলে নিয়ে বের হলে
ভালো হয়। সাধারণ জ্ঞান চর্চার জন্য কিছু ওয়েব সাইট দেখা অথবা সাধারণ
জ্ঞানের বই পড়া দরকার ।সেক্ষেত্রেও ফোনের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা উচিত।
চলাফেরার মাঝে চোখ বুলাতে থাকলে বাসায় এসে দুই-এক ঘন্টা খাতা কলম নিয়ে বসলে
খুব ভালো একটা প্রস্তুতি হতে থাকবে।খুবই ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে। চাকুরী
করে বাসায় ফিরে খুব ক্লান্তিতে পড়ার ইচ্ছে হবে না এটাও যেমন স্বাভাবিক
তেমনি নিয়মিত না পড়লে চাকুরী পরীক্ষায় ভালোও করা যাবে না সেটাও বাস্তব।
★বুয়েট পরীক্ষার ধরনঃ★
বুয়েটে অনুষ্ঠিত চাকুরীর পরীক্ষায়
মোটামুটি দুইটা অংশ থাকে।একটা ডিপার্টমেন্টাল অংশ আরেকটা নন-ডিপার্টমেন্টাল
অংশ।ডিপার্টমেন্টাল অংশে মূলত মেকানিক্যালের মূল বিষয়গুলোর উপর প্রশ্ন হয়ে
থাকে। যেমনঃ Thermodynamics, IC Engine, Fluid Mechanics, Heat Transfer,
Power Plant Engineering, Refrigeration and Air Conditioning, Strength of
Materials, Theory of Machines, Engineering Mechanics, Machine Tool,
Automobile Engineering ইত্যাদি।উক্ত বিষয়গুলো থেকে ছোট ছোট থিওরী,
ড্রায়াগ্রাম এবং ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেম থাকে। সবগুলো পরীক্ষাতেই কমন বিষয়
হলো ড্রয়িং।ড্রয়িংএ মূলত TOP VIEW, FRONT VIEW & RHS VIEW আঁকতে বলে
মোটামুটি সময়।ননডিপার্টমেন্টাল অংশে সাধারণ জ্ঞান, সাধারণ গণিত, বাংলা,
ইংরেজী, মানসিক দক্ষতা (/Analytical Ability) এইসব থাকে।
★মার্কস ডিস্ট্রিবিউশনঃ★
পরীক্ষাভেদে মার্কস ডিস্ট্রিবিউশনের ভেরিয়েশন হয়।পরীক্ষায় সর্বোমোট ১০০
অথবা ৮০ মার্কস থাকে। এর মধ্যে মোটামুটিভাবে ৬০% মার্কস থাকে
ডিপার্টমেন্টাল প্রশ্নে আর বাকি মার্কস ননডিপার্টমেন্টাল প্রশ্নে।
ডিপার্টমেন্টাল থেকে সাধারণত বারোটা বা চৌদ্দটা প্রশ্ন থাকে। আর এই প্রতিটা
প্রশ্নের মান পাঁচ বা ছয় নম্বর করে। আর ননডিপারটমেন্টাল অংশ বিভিন্ন সময়
বিভিন্ন রকম হয়। কখনো ষাটটা নৈর্ব্যক্তিক থাকে।(০.৫×৬০=৩০ নম্বর)। আবার
কখনো বিশটা Analytical Ability থাকে যার মান (১×২০=২০)এবং সাথে আরো
চল্লিশটা নৈর্ব্যক্তিক থাকে যার মান (০.৫×৪০=২০)। এভাবে বিভিন্ন সময়
প্রশ্নের তারতম্য হয়। পরীক্ষাগুলোতে মূলত দেড় ঘন্টা সময় থাকে।
★বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতিঃ★
শুরুতেই বিগত বছরের চাকুরি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেখে একটা ছক তৈরি করা
যেতে পারে। ফলে প্রিপারেশন নিতে সুবিধা হবে। এজন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে
Fundamentals of Mechanical Engineering বইটি। তবে ছক তৈরির ক্ষেত্রে
অবশ্যই শুধু মাত্র যেসব টপিক পরীক্ষায় এসেছে সেগুলো না পড়ে তার সাথে ওই রকম
আরো কিছু টপিক যোগ করে পড়া উচিত। এতে করে প্রশ্নের ধরণ পরিবর্তন হলেও
প্রস্তুতি অনেক ভালো থাকবে।
★ননডিপার্টমেন্টাল থেকে কিভাবে পড়বো?★
ননডিপার্টমেন্টালের জন্য কোন ধরাবাধা সিলেবাস নেই। তবে বিসিএস বা ব্যাংক
জবের প্রস্তুতির জন্য যেসব বই বা নোট বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো পড়লেই
মোটামুটি হয়ে যাবে। তাছাড়াও কিছু ওয়েব সাইট থেকে পড়াশুনা করা যেতে পারে।
যেমনঃ indiabix.com; examveda.com ইত্যাদি।
★বুয়েটের বাইরের প্রস্তুতি কিভাবে নিবো?★
বুয়েটের বাইরে যেসব পরীক্ষা হয় তার অধিকাংশই MIST এর আন্ডারে অথবা DU এর
IBA এর আন্ডারে হয়। MIST তে মোটামুটিভাবে বুয়েট ভিত্তক প্রস্তুতি থাকলেই
হবে। আর IBA এর আন্ডারে পরীক্ষাগুলোর ক্ষেত্রে departmental MCQ থাকে আর
এজন্য R.S.Khurmi এর লেখা Conventional mechanical Engineering বইটা পড়া
যেতে পারে। IBA এর আন্ডারে পরীক্ষাগুলোতে ডিপার্টমেন্টাল প্রশ্ন ৫০% আর
ননপিার্টমেন্টাল প্রশ্ন ৫০% হয়ে থাকে। তবে ৬০%+৪০% মার্কস ডিসট্রিবিউশনও
হয়। এরজন্য IBA এর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলোর মত ননডিপার্টমেন্টাল
প্রশ্নগুলো পড়া ভালো। সাথে বিসিএসের প্রস্তুতির মত বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ
জ্ঞান এসব।
★প্রতিদিন কত ঘন্টা পড়বো?★
প্রতিদিন যে যত সময়
দিতে পারবে তার তত দ্রুত প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হবে। চাকুরিজীবী হলেও প্রতিদিন
দুই-এক ঘন্টা ন্যূনতম পড়াশুনা করা দরকার। আর যারা চাকুরি করেন না তাদের
জন্য দিনের সর্বোচ্চ সময়টা প্রস্তুতির জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
কতদিন পড়া লাগবে? কয়টা ভাইবা দেওয়া লাগবে!!
কতদিন পড়া লাগবে আর কয়টা ভাইভা দেওয়া লাগবে এই ব্যপারটা আপেক্ষিক। কারণ
কারো যদি সব সাবজেক্টে খুব ভালো দখল থাকে তাহলে তার সময় কম লাগবে। তবে গড়ে
প্রায় দুইবছর নিয়মিত পড়াশুনা করতে থাকলে একটা চাকুরি হবেই।অনেকের ছয় মাসেও
হয়ে যেতে পারে। কয়টা ভাইভা দেওয়া লাগবে এই বিষয়টা প্রত্যেকের জন্য আলাদা।
কেউ প্রথম ভাইভাতেই বাজিমাত করে আবার কেউ বিশতম তে। আমার একটা চাকুরি
হয়েছিল পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিতে আর ওটি সম্ভবত আমার নয় কি দশ তম ভাইভা
ছিল।
আশা করি সবাই ভালো করে শুরু করতে পারবেন।শুভ কামনা রইল।
লেখকঃ এমরান হোসেন, অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার (বি.ও.পি.), হরিপুর পাওয়ার লিমিটেড।
Subscribe to:
Posts (Atom)
-
অধিকাংশ ইন্ডাষ্ট্রি বা বড় বড় প্রতিষ্ঠানে Fire Safety খুব গুরুপ্ত্বপূর্ণ একটা বিষয়। একাডেমিক পড়াশোনায় এইটা অনেক ক্ষেত্রে পড়ানো হয়, অনেক ...
-
নকিং /ডেটোনেশন/খটখট/ভটভটঃ ফুয়েলের কিছু অংশে তড়বড়ে(রাপিড) অটো-ইগনিশনের ফলে আই ছিঃ ইঞ্জিনের ভিত্রে একখানা উচ্চ তীব্রতার চাপ তরঙ্গ তৈয়ার হয়।...
-
নেট পজিটিভ সাকশন হেড(NPSH) : পাম্পের ইনলেট হেড এবং তরলের বাষ্পচাপের জন্য অনুরূপ হেডের পার্থক্যকে নেট পজিটিভ সাকশন হেড বলে। NPSH=(P/ρ...